ইঞ্জিন চালুকরণ পদ্ধতি
কোন ইঞ্জিনই আপনা আপনি চালু হতে পারে না। একে কোন কিছু দ্বারা ঘুরিয়ে দিলেই একমাত্র চালু হতে সক্ষম হয়। ইঞ্জিনকে ঐ সময় পর্যন্ত ঘুরানোর প্রয়োজন হয় যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ইঞ্জিনের দু-একটি সিলিন্ডারে শক্তি উৎপাদন না হয়। যখন ইঞ্জিনের কোন একটি সিলিন্ডারে শক্তি উৎপন্ন হয় তখন গতি জড়তার কারণে ক্র্যাংক শ্যাফট ঘুরিয়ে বাকি সিলিন্ডার গুলোতেও ফায়ারিং ঘটিয়ে ইঞ্জিনকে চালু করে থাকে। একটি ইঞ্জিনের ক্র্যাংক শ্যাফটকে যে কোন ভাবে ঘুরাতে পারলেই ঐ ইঞ্জিনকে চালু করা সম্ভব যদি ইঞ্জিনে কোন ত্রুটি না থাকে। সেটা হাত দিয়ে ঘুরানো যেতে পারে অথবা কোন যন্ত্র যেমন- মোটর, কম্প্রেশড এয়ার কিংবা অন্য আরেকটি চলমান ইঞ্জিনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। মূল কথা হল ইঞ্জিনের ক্র্যাংক শ্যাফটকে ঘুরিয়ে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে ফায়ারিং ঘটাতে পারলেই ইঞ্জিন চালু হবে।
ইঞ্জিন চালুকরণ পদ্ধতিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। হাতল বা হ্যান্ডেল দ্বারা ঘুরিয়ে ইঞ্জিন চালু করা। যেমন- ট্রাক্টরের ইঞ্জিন।
২। রোপ/দড়ি টেনে চালু করণ। যেমন- বাসা বাড়িতে বা দোকনে ব্যবহৃত ছোট জেনারেটর।
৩। কিক বা পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে চালু করণ। যেমন- মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন।
৪। সংকুচিত বাতাস দ্বারা চালু করণ। যেমন- বড় বড় জাহাজের ইঞ্জিন।
৫। বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা চালু করণ। যেমন- গাড়ি, বাস, ট্রাক ইত্যাদির ইঞ্জিন।
যে সকল ইঞ্জিন আকৃতিতে ছোট তাদেরকে সাধারণত পেশি শক্তি দ্বারা যেমন হাতল দ্বারা বা দড়ি দ্বারা কিংবা কিক করে চালু করা সম্ভব। কিন্তু আকৃতিতে বড় ইঞ্জিনকে এভাবে ঘুরানো সম্ভব হয় না। যার ফলে ঐ সকল ইঞ্জিনকে অন্য কোন শক্তি দ্বারা চালু করার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা ইঞ্জিন চালুকরণ পদ্ধতি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। আর আমরা এই পদ্ধতিটি নিয়েই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
চালুকরণ পদ্ধতির যন্ত্রাংশসমূহঃ-
১। ব্যাটারি (Battery)|
২। চালুকরণ সুইচ (Starting
Switch)
৩। সলেনয়েড সুইচ (Solinoid
Switch)
৪। চালুকরণ মোটর ও ড্রাইভ মেকানিজম (Starting
Motor & Drive Mechanism)
৫। সংযোগকারী তার সমূহ (Connected Wire)
চালুকরণ পদ্ধতির যন্ত্রাং সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে কিছু বর্ণনা করা হলঃ-
১। ব্যাটারি (Battery):- চালুকরণ পদ্ধতিতে ৬/১২ ভোল্টের একটি বা প্রয়োজন অনুসারে একাধিক ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ব্যাটারি দ্বারা চালুকরণ পদ্ধতি সহ ইঞ্জিনের সকল প্রকার ইলেকট্রিক্যাল সিষ্টেম পরিচালিত হয়ে থাকে।
২। চালুকরণ সুইচ (Starting Switch) :- এই সুইচ দ্বারা ইঞ্জিনের চালুকরণ মোটর সহ ইঞ্জিনের সকল ইলেকট্রিক সার্কিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু ও বন্ধ করা হয়।এবং এটির সাহায্যে স্টাটিং মোটরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ইঞ্জিন চালু করা হয়।
৩। সলেডয়েড সুইচ (Solinoid Switch) :- ইঞ্জিনের চালুকরণ পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণ কারেন্ট প্রয়োজন হয় এবং সাধারণ সুইচ দ্বারা এই অতিরিক্ত কারেন্ট সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই এই উচ্চ মাত্রার কারেন্ট প্রবাহে সুইচিং করানোর জন্য এক ধরণের বিশেষ সুইচের প্রয়োজন হয়। যাকে বলাহয় সলেনয়েড সুইচ।
৪। চালুকরণ মোটর এবং ড্রাইভ মেকানিজম (Starting Motor
& Drive Mechanism) :- ক্র্যাংক শ্যাফকে ঘূর্ণন গতি প্রদান করার জন্য যে মোটরটি ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় চালুকরণ মোটর বা স্টার্টিং মোটর।এই মোটরের সাথে ড্রাইভ মেকানিজম থাকে। এর মাথায় একটি পিনিয়ন লাগানো থাকে যা মোটর চালু অবস্থায় স্ত্রু এর ক্রিয়ায় সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং ফ্লাই হুইলের রিং গিয়ারের দাঁতের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ক্র্যাংক শ্যাফটকে ঘূর্ণন গতি প্রদান করে ইঞ্জিনকে চালু করে। স্টার্টিং সুইচ বন্ধ করে দিলে উক্ত গিয়ার স্প্রিং এর টানে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।
৫। সংযোগকারী তার (Connected Wire) :- চালুকরণ পদ্ধতিতে যেহেতু খুবই বেশি এ্যাম্পিয়ার প্রবাহিত হয় তাই এখানে উচ্চ ক্ষমতা পরিবহণ সম্পন্ন তার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
চিত্রঃ- চালুকরণ মোটর দ্বারা ইঞিন চালুকরণ পদ্ধতি।
কার্যপ্রণালীঃ- চালুকরণ মোটর দ্বারা ইঞ্জিন চালুকরণ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ এর উৎস হিসেবে এক বা একাধিক ৬/১২ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইঞ্জিন চালু করার সময় চালুকরণ সুইচটি অন করলে ব্যাটারি থেকে প্রয়োজনীয় কারেন্ট সলিনয়েড সুইচের মাধ্যমে মোটরের ফিল্ড কয়েলে যায়। উক্ত কারেন্ট কার্বন ব্রাশ ও কমুটেটর হয়ে আর্মেচারে প্রবাহিত হলে চুম্বকীয় প্রভাবের বলে মোটরের আর্মেচার ঘুরতে থাকে। ফলে আর্মেচার শ্যাফট সংযু্ক্ত কুইক পিনিয়ন ঘুরে সেন্ট্রিফিউগ্যাল ফোর্সের প্রভাবে স্প্রীং সহকারে সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং ফ্লাই হুইলের দাঁত/রিং গিয়ারের সাথে মেশ হয়ে ফ্লাই হুইলসহ ক্র্যংক শ্যাফটকে ঘুরিয়ে ইঞ্জিনকে চালু করে দেয়।
ইঞ্জিন চালু হলে স্টার্টিং সুইচ অফ করলে মোটরের কুইক পিনিয়ন, স্প্রীং এর টানে ফ্লাই হুইল হতে বিছিন্ন হয় এবং পূর্বের স্থানে ফিরে যায়। এভাবে এ পদ্ধতির মাধ্যেমে ইঞ্জিন প্রতিবার চালু কর তে চালুকরণ সুইচকে ২০-৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে হয়। কিন্তু কোন কারণে এই অবস্থায় ইঞ্জিন চালু না হলে সাথে সাথে চালুকরণ সুইচ অফ করতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করতে হবে। দুই তিনবার চেষ্টা করার পর চালু না হলে বুঝতে হবে ইঞ্জিনে অন্য কোন সমস্যা আছে। এজন্য বার বার চালু করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। নাহলে চালুকরণ মোটর অতিরক্তি গরম হয়ে পুড়ে যেতে পারে এবং ব্যাটারিও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। কারণ ইঞ্জিন চালু করার সময় একটি চালুকরণ মোটর প্রায় ৩৫০-৪৫০ এ্যাম্পিয়ার ডিসি কারেন্ট গ্রহণ করে থাকে। আর একটি ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ অবস্থায় ৩-৪ বার ইঞ্জিনকে চালু করা সম্ভব হয়। ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়ে গেলে তা ইঞ্জিনের সংযুক্ত চার্জিং পদ্দতিতে পুনরায় চার্জ হয়ে যায়।
ইঞ্জিন চালু হলে স্টার্টিং সুইচ অফ করলে মোটরের কুইক পিনিয়ন, স্প্রীং এর টানে ফ্লাই হুইল হতে বিছিন্ন হয় এবং পূর্বের স্থানে ফিরে যায়। এভাবে এ পদ্ধতির মাধ্যেমে ইঞ্জিন প্রতিবার চালু কর তে চালুকরণ সুইচকে ২০-৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে হয়। কিন্তু কোন কারণে এই অবস্থায় ইঞ্জিন চালু না হলে সাথে সাথে চালুকরণ সুইচ অফ করতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করতে হবে। দুই তিনবার চেষ্টা করার পর চালু না হলে বুঝতে হবে ইঞ্জিনে অন্য কোন সমস্যা আছে। এজন্য বার বার চালু করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। নাহলে চালুকরণ মোটর অতিরক্তি গরম হয়ে পুড়ে যেতে পারে এবং ব্যাটারিও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। কারণ ইঞ্জিন চালু করার সময় একটি চালুকরণ মোটর প্রায় ৩৫০-৪৫০ এ্যাম্পিয়ার ডিসি কারেন্ট গ্রহণ করে থাকে। আর একটি ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ অবস্থায় ৩-৪ বার ইঞ্জিনকে চালু করা সম্ভব হয়। ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়ে গেলে তা ইঞ্জিনের সংযুক্ত চার্জিং পদ্দতিতে পুনরায় চার্জ হয়ে যায়।

0 মন্তব্যসমূহ