ব্যাটারি কি? ব্যাটারির বিভিন্ন ধরণগুলো কি? কি?


ব্যাটারি মূলত  একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যার এক বা একাধিক ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেল দ্বারা গঠিত। বিভিন্ন ধরণের ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশে শক্তির উৎস হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। ‍উধাহণ স্বরূপ বলা যায়, টর্চ লাইট, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক কার ইত্যাদি। কিন্তু ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স এর ভিন্ন ভিন্ন কাজের এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এই ব্যাটরি ও ভিন্ন ভিন্ন  হয়ে থাকে।



আমরা ব্যাটারিকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারিঃ-
       ১। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারি (Household Battery)
       ২। ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল বা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারি (Industrial Battery)
      ৩। যানবহণ  এর ব্যাটারি (Vehicle Battery) 

১। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারিঃ  এই ধরণের ব্যাটারি বলতে গেলে আমাদের জীবনে একটি নিত্য প্রয়োজনীয় সঙ্গী। এই ব্যাটারিকে আবার আমরা দুইটি ভাগে ভাগ করতে পারি। 
      (ক) রিচার্জেবল ব্যাটারি (Rechargeable Battery)
      (খ) নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি (Non-Rechargeable Battery)

রিচার্জেবল ব্যাটারি (Rechargeable Battery):- এই ধরণের ব্যাটারিকে বার বার চার্জ করে ব্যবহার করা যায় যতদিন পর্যন্ত ব্যাটারি আয়ুষ্কাল থাকে বা ব্যাটারিটি ভাল থাকে। এ ধরণের ব্যাটারি সাধারণত যন্ত্রপাতির অভ্যন্তরে থাকে। উধাহণস্বরূপ সহজেই বলা যায় আমাদের হাতের ব্যবহৃত স্মার্ট ফোনের ব্যাটারিটি একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি যা আমরা বার বার চার্জ করে ব্যবহার করতে পারি। কিছু রিচার্জেবল ব্যাটারি সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।




লিড এসিড ব্যাটারি (Lead Acid Battery):- এটি এক ধরণের রিচার্জেবল ড্রাইসেল ব্যাটারি যা একটি চতুর্ভূজ আকৃতির প্লাষ্টিক কভারের ভিতরে থাকে। এটি মূলত Wheel Chairs, Golf Carts, Military Aircraft, RVʼs, Boats এসব জায়গায় ব্যবহৃত হয়। 

➤ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি (Lithium-ion battery):- এটি একটি ছোট্ট রিচার্জেবল ড্রাইসেল ব্যাটারি, সা ধারণত শক্ত প্লাষ্টিক কভার কিংবা ছোট সিলিন্ডার আকৃতির বাটন আকারে পাওয়া যায়। যাকে মূলত বাটন সেল নামে ডাকা হয়। এই ধরণের ব্যাটারি সাধারণত সেলফোন, ল্যাপটপ, ভিডিও ক্যামেরা ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।





➤ নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি (Nickel-Cadmium battery):-  এটিও এক ধরণের ছোট্ট রিচার্জেবল ড্রাইসেল ব্যাটারি। এটি হার্ড প্লাষ্টিকের কভারের উপর পলি-আবৃত সেল প্যাকেট আকারে পাওয়া যায়। এই ব্যাটারি সাধারণত হ্যান্ডহোল্ড ইলেকট্রনিক্স যেমন রিমোট কন্ট্রোল রোবট বা খেলনা গাড়ি এবং মেকানিক্যাল ইকুইপমেন্টস এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 





➤ নিকেল মেটাল হাইড্রাইড ব্যাটারি (Nickel Metal Hydride Battery):- নিকেল মেটাল হাইড্রাইড ব্যাটারিও এক প্রকার ছোট রিচার্জেবল ড্রাইসেল ব্যাটারি। এগুলো সাধারণত AAA, AA, C, D, 9 Volt, 12 Volt  ইত্যাদি আকারে পাওয়া যায়। 

আমরা এতক্ষণ রিচার্জেবল ব্যাটারি সম্পর্কে জানলাম। এবার নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানবো।

নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি (Non-Rechargeable Battery):-  এই ধরণের ব্যাটারিকে  কোন বাহিরের সোর্স ব্যবহার করে চার্জ করে ব্যবহার করা যায় না। বলতে গেলে এটি একটি One Time Use পন্য। অর্থাৎ একবার সম্পূর্ণরূপে ব্যবহৃত বা ডিসচার্জ হয়ে গেলে এই ধরণের ব্যাটারি ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এগুলোকে সিঙ্গেল ইউজ ব্যাটারিও বলা হয়ে থাকে। উধাহরণ স্বরূপ আমরা দেওয়াল ঘড়ি, রিমোট কন্ট্রোলার ইত্যাদিতে যে সকল ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকি। নিম্নে কয়েক ধরণের নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হল।

➤ এ্যালকালাইন এবং কার্বণ জিংক ব্যাটারি (Alkaline And Carbon Zinc Battery):- এটি একটি ছোট্ট ড্রাইসেল নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি। জিংক কার্বণ ব্যাটারি সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে ভারি কাজে ব্যবহার করা যায় না। এগুলো সাধারণত AAA, AA, C, D, 9 Volt, 12 Volt  ইত্যাদি আকারে পাওয়া যায়। 



➤ লিথিয়াম ব্যাটারি (Lithium):- এ ধরণের ছোট ড্রাইসেল নন রিচার্জেবল ব্যাটারি সাধারণত AAA, AA, C, D, 9 Volt,  ইত্যাদি আকারে পাওয়া যায়। এগুলো টায়ার প্রেসার সেন্সর, এ্যালার্ম, পেসমেকার, রিমোট কন্ট্রোল কার লকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

➤ মার্কারী (Mercury):- এ ধরণের ছোট ড্রাইসেল ব্যাটারি সাধারণত  AA এবং 9 Volt, আকারে পাওয়া যায়। এ ধরণের ব্যাটারি মেডিক্যাল ডিভাইস এবং মিলিটারি গ্যজেটস গুলোতে ব্যবহৃত হয়। 

➤ সিলভার অক্সাইড ব্যাটারি (Silver Oxide battery):- এই ধরণের নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি পাওয়ার সাপ্লাই এর উপর ভিত্তি করে ছোট কিংবা বড় উভয় ধরণের হয়ে থাকে।এগুলো ব্যাটারি বাটন সেল এবং হাই ভোল্টেজ আকৃতিতে পাওয়া যায়। এই ধরণের ব্যাটারি Hearing Aids, Torpedoes এবং Aircraft এ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।



➤ জিংক এয়ার ব্যাটারি (Zinc Air battery):- এই ধরণের নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি সাধারণত ছোট বাটন সেল এবং 9 Volt, আকারে পাওয়া যায়। এই ধরণের ব্যাটারি ইলেকট্রিক্যাল যানবহণে ব্যবহার করা হয়। 

২। ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল বা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারি (Industrial batteries):-  এই ধরণের ব্যাটারি সাধারণত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনারী, রেলরোড, ডাটা সেন্টার গুলোর ব্যাকআপ সোর্স, ইউটিলিটিজ এবং টেলিকমনিকেশন সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চলুন তাহলে আমরা কয়েক প্রকারের ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল ব্যাটারির সাথে পরিচিত হই।
➤ এ্যাবসুলুট ব্যাটারি (Absolyte battery):- এগুলো বড় আকারের ব্যাটারি যা লেড এসিড ও ক্যাডমিয়াম দ্বারা গঠিত। একে vented VRLA(Valve regulated, lead-acid battery) বলা হয়ে থাকে। এই ধরণের ব্যাটারি টেলিকমিউনিকেশ সিস্টেম, রেলরোড সুইচগিয়ার ও সিগনাল এবং সোলার সিষ্টেমে ব্যবহার করা হয়। 

➤ লার্জ ফ্লোডেড সেল (Large Flooded Cell):- নাম অনুসারেই বোঝা যায় এটি একটি বৃহৎ আকৃতির ব্যাটারি। এটি মূলত লেড এসিড ভেন্টেড ব্যাটারি। এটি চতুর্ভূজ আকৃতির এবং শক্ত কেস আকৃতির হয়ে থাকে। এই ধরনের ব্যাটারি স্টেশনারী পাওয়ার এবং ইউটিলিটিতে ব্যবহার করা হয়। 

➤ নিকেল আয়রণ ব্যাটারি (Nickel Iron):- এই ধরণের ব্যাটারি মধ্যম আকৃতি থেকে বড় আকৃতির হয়ে থাকে। এগুলোও ফ্লোডেড সেল ভেন্টেড রিচার্জেবল ব্যাটারি। এগুলো চতুর্ভূজ আকৃতির এবং মেটাল কেস আকৃতির হয়ে থাকে। এই ধরণের ব্যাটারি রেলরোড সিগন্যাল এবং মাইনিং অপারেশন এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

➤ ওয়েট নিকেল ক্যাডমিয়াম (Wet Nickel Cadmium):- এই ধরণের ব্যাটারি সাধারণ সাইজ থেকে বড় সাইজ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলো ফ্লোডেড সেল রিচার্জেবল ব্যাটারির আওতাভূক্ত। এটা pocket plate এবং sinner plate এই দুই ধরণের হয়ে থাকে। এটি শক্ত কেস মাল্টি সেল অথবা কঠের কেস আকৃতিতে পাওয়া যায়। এই ধরণের ব্যাটারি মেরিন এবং বিমান চালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। 

৩। যানবহণ এর ব্যাটারি (Vehicle batteries):- এই ধরণের ব্যাটারি ব্যবহার খুবই সুবিধাজনক প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং ঝাকুনিতেও সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এই ধরণের ব্যাটারি বিভিন্ন মোটরযান, জাহাজ, বোট ইত্যাদি এর লাইটিং, চালুকরণ পদ্দতি এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যাটারিও বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। নিম্নে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হল। 

➤ হাইব্রিড অটোমোটিভ ব্যাটারি (Hybrid Automotive Battery):- এগুলো বড় আকৃতির রিচার্জেবল ব্যাটারি। NiMH এবং Li-ion ব্যাটারিগুলো ব্যাপকভাবে হাইব্রিড অটোমোটিভ ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো হাইব্রিড এবং ইলেকট্রিক অটোমোবাইলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

➤ লেড এসিড ব্যাটারি (Lead Acid battery):- এগুলো এক ধরণের ভেন্টেড  ফ্লোডেড সেল রিচার্জেবল ব্যাটারি যা শক্ত কেস আকৃতিতে পাওয়া যায়। এই ধরণের ব্যাটারি বোট, মোটর সাইকেল এবং আউটডোর পাওয়ার ইকুইপমেন্টস এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

এই ছিলো মোটামুটি আলোচনা। এখান থেকে আমরা ব্যাটারি এবং তার বিভিন্ন প্রকার এবং ব্যবহার ক্ষেত্র সম্পর্কে জানলাম। আপনাদের ভাল লাগলে অবশ্যেই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন এবং অন্যদেরকেও জানতে সহায়তা করবেন। 
আপনার কর্মক্ষেত্রে বা বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস এবং ইকুইপমেন্টসকে কিভাবে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া হাত থেকে সহজেই রক্ষা করতে পারবেন এবং কিভাবে মরিচা দূর করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন প্রাকৃতিক উপায়ে সে সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন